ভারত-পাকিস্তানের এই যুদ্ধে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের মৃত্যু ঘটল

বিগত দশ-বারো বছর ধরে আমরা দেখছি, কীভাবে ভারতবর্ষের মূলধারার সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম বা সোশাল মিডিয়া শাসক দলের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। মিথ্যা, অর্ধসত্য ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক প্রতিবেদন প্রচারের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিচারধারা সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরলসভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরা ভারতবর্ষের সংবিধানে বিশ্বাস রাখে না, যদিও তা আজও প্রকাশ্যে বলার সাহস এদের নেই। এদের বিশ্বাস, ভারতের জনসংখ্যার আশি শতাংশ সংখ্যাগুরু জনগণ— অর্থাৎ হিন্দুরাই— এই দেশের প্রকৃত নাগরিক। একমাত্র হিন্দুরাই এই দেশের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ও নাগরিক অধিকারের দাবিদার। এদের মতে, দেশে বাকি যেসব জনগোষ্ঠী রয়েছে, বিশেষ করে জনসংখ্যার চোদ্দ শতাংশ মুসলমান, তাঁরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে এ-দেশে— অর্থাৎ হিন্দুস্থানে— থাকতে পারেন। অর্থাৎ ভারতবর্ষ মূলত হিন্দুরাষ্ট্র; মুসলমানদের থাকতে হলে হিন্দুদের আধিপত্য মেনেই থাকতে হবে। স্বাধীনতা তথা দেশভাগের সময় ভারতবর্ষে জাতি, ধর্ম, বর্ণ-নির্বিশেষে সকলের জন্য সমানাধিকারের যে সাংবিধানিক শপথ নেওয়া হয়েছিল, তা এদের দৃষ্টিতে ছিল একটি সর্বৈব ‘ভুল’। আজ, যে-কোনও প্রকারে সেই ‘ভুল’ বিজেপি শুধরে নিতে চায়।

প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও, এই বিচারধারা মেনেই আমাদের দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম ও টেলিভিশন চ্যানেল কাজ করে। এদের সঙ্গে জোট বেঁধে সুর মেলায় ভারতীয় জনতা পার্টির পোষা আইটি সেল ও তাদের ট্রোলবাহিনী। গত এক দশকে এই বিচারধারার প্রচার অত্যন্ত সফলভাবে হয়েছে এবং সুকৌশলে ইসলামোফোবিয়াকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। আমাদের দেশের প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ— যাঁরা গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন— কার্যত মেনে নিয়েছেন যে, দেশের সমস্যাগুলির পিছনে মুসলমানরাই একটি বড় কারণ। তাঁদের ধারণা, এই চোদ্দ শতাংশ মুসলমানের জন্যই দেশের আশি শতাংশ হিন্দু ‘খতরে মে হ্যায়’। তবে এই প্রবণতা শুধু আমাদের দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতেই ইসলামোফোবিয়া ও দক্ষিণপন্থী রাজনীতির দাপট বেশ স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে।

Image removed.

 

প্রশ্ন উঠতে পারে— মে মাসে চারদিন ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যে সংঘর্ষ হল, তার সঙ্গে উপরের কথাগুলি কীভাবে যুক্ত? পহলগামের ঘটনার পরে এবং ৭ মে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের সন্ত্রাসঘাঁটিগুলিতে প্রত্যাঘাত করার পর টেলিভিশন ও সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে মিথ্যে ও ভুয়ো খবরের বিস্ফোরণ ঘটে গেল, তা অভূতপূর্ব। আমাদের দেশের ইতিহাসে গণমাধ্যমকে এর আগে কখনও এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে কাজ করতে দেখা যায়নি। একটি চ্যানেল জানাচ্ছে, ভারতীয় সেনা করাচি বন্দর দখল করে নিয়েছে। আরেকটি বলছে, ইসলামাবাদে গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে, সেনাপ্রধান আসিফ মুনির অবরুদ্ধ। মনে হচ্ছিল যেন কাল সকালেই পাকিস্তান বলে কিছু থাকবে না। অথচ, এসব তথাকথিত ‘খবরে’র একটিও বিশ্বাসযোগ্য নয়।

আসলে, এই চ্যানেলগুলি সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে আসেনি। এদের কাছে সামাজিক দায়িত্ব নয়, চটকদার মিথ্যার প্রচারই হল ব্যবসার মডেল। ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ— সবই এসেছে শুধু মুনাফা বাড়াতে, এবং যে-কোনও উপায়ে সেই মুনাফা অর্জন করাই এদের লক্ষ্য। সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হল, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে এই পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। আমাদের ‘সৌভাগ্য’ যে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন, কিন্তু কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি। কারণ, তিনি কখনও কোনও প্রশ্নের উত্তর দেন না। নরেন্দ্র মোদি স্বাধীন ভারতের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, যাঁকে আগাম অনুমতি ছাড়া বা অনুমোদিত সাংবাদিক ছাড়া প্রশ্ন করা যায় না। পহলগাম ঘটনার পরে যে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছিল, সেখানেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। এখনও পর্যন্ত আমরা জানি না, আমাদের কোনও যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না। তিন বাহিনীর পক্ষ থেকেও জানানো হয়নি, যুদ্ধে আমাদের কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কোনও জওয়ান শহিদ হয়েছেন কি না বা কতজন আহত।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার প্রায় দু-সপ্তাহ কেটে গেলেও দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা এইসব বিষয়ে প্রায় কিছুই জানি না। এই অবস্থায় গণমাধ্যম ‘তথ্যের শূন্যস্থান’ পূরণ করার নামে মাঠে নেমেছে, এবং চারদিন ধরে একের পর এক অসত্য, অতিরঞ্জিত ‘তথ্য’ বিক্রি করে চলেছে শুধু মুনাফা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে।

Image removed.

 

পাশাপাশি, আজকের দিনে ফেসবুক, টুইটার বা ‘এক্স’-এর মতো সামাজিক মাধ্যমের একমাত্র লক্ষ্য হল— পোস্টগুলো যেন ভাইরাল হয়। তাতে কতটা সঠিক তথ্য রয়েছে, আদৌ কোনও তথ্য আছে কিনা— সেটা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। পোস্টের গুণমান বা বৈধতা বিচার্য নয়, বরং সেটি যত বেশি সংখ্যক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছয়, ততই তাদের লাভ। এটাই এই প্ল্যাটফর্মগুলোর মূল ব্যবসায়িক মডেল।

১৪৫ কোটি জনসংখ্যার দেশে, এই মুহূর্তে গ্রাম-শহর মিলিয়ে প্রায় একশো পনেরো থেকে একশো কুড়ি কোটি সক্রিয় সিম বা সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল রয়েছে। অর্থাৎ, এমন এক বিপুল বাজারে, যে-কোনও একটি পোস্ট যদি কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছয়, তাহলেই এই প্ল্যাটফর্মগুলোর উদ্দেশ্য সফল। তাতে সে পোস্টে সত্যি লেখা আছে, মিথ্যা লেখা আছে, না কি অর্ধসত্য— তা নিয়ে তারা বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয়। গাজার যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি ‘পাকিস্তানে ভারতীয় হামলা’ বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।[1]

আমি আটচল্লিশ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছি, কিন্তু সংবাদমাধ্যমের এমন অসাধুতা আগে কখনও দেখিনি।[2]

Image removed.

 

আর একদিকে যখন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস্যাপকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা তথ্যের বন্যা বইছে, তখন এই সামাজিক মাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষ সবকিছু দেখেও অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। একটা উদাহরণ দিই— ফ্রন্টলাইন পত্রিকার সম্পাদক বৈষ্ণা রায় একটি টুইট করেন যে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শব্দবন্ধটি তাঁর পছন্দ হয়নি। কেন পছন্দ হয়নি, সে বিষয়ে তাঁর নিজস্ব মত ও যুক্তি রয়েছে। সেটা অন্যদের পছন্দ হবে কি না, সে ভিন্ন বিষয়। কিন্তু এই টুইট করার পর তিনি এতটাই অশ্লীল ট্রোলিং-এর শিকার হন যে তাঁকে তাঁর হ্যান্ডেলটি বন্ধ করে দিতে হয়। শুধু তাই নয়, আমি যখন শ্রীমতী রায়ের সেই টুইটটিই রি-টুইট করি, তখন কয়েকশো লোক আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে। মজার বিষয় হল, এদের প্রায় কারও প্রকৃত নাম নেই, অধিকাংশই ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট খুলেছে, এবং এদের কোনও ফলোয়ারও নেই। আমি যখন টুইটারের কাছে অভিযোগ জানাই, তারা জানায় যে এই ব্যবহারকারীরা নাকি টুইটারের ‘কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড’ লঙ্ঘন করেনি।

অর্থাৎ বোঝা গেল, একদল মানুষ একসঙ্গে হয়ে একজনকে— বিশেষত একজন মহিলাকে— অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছে, তবুও টুইটারের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বস্তুটির কোনও লঙ্ঘন ঘটছে না! অথচ তথ্য বলছে, গত দশ-বারো বছরে ভারতবর্ষে যতগুলো মব লিঞ্চিং হয়েছে, তার পেছনে ছিল কোনও না কোনও মিথ্যে বা বানানো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট বা হোয়াটস্যাপ মেসেজ। কয়েক বছর আগে রাজস্থানে এক বাঙালি শ্রমিককে আগুনে জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যার ভিডিও লাইভ করে হোয়াটস্যাপ মারফত ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ যখন জানতে চায় কে এই ভিডিও বানিয়েছে, তখন হোয়াটস্যাপ জানায়, তাদের প্রযুক্তি (end-to-end encryption) এমন যে তাদের কাছে সেই তথ্য নেই। এই ঘটনা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে।

আরও একটা উদাহরণ দিই— বিক্রম মিস্রি। তিনি ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সচিব ও অপারেশন সিঁদুরের পর সরকারের তরফ থেকে মুখপাত্র। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর তাঁকে এত ট্রোল করা হল, তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে এত অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করা হল যে তাঁকেও প্রায় তাঁর টুইটার হ্যান্ডেল বন্ধ করতে হচ্ছিল। এই আক্রমণ তো পাকিস্তানের কেউ করছে না, করছে ভারতীয়রাই। তাদের এটুকু বোঝার বুদ্ধি নেই যে শ্রী মিস্রি যুদ্ধবিরতির সংবাদটি সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করছেন মাত্র, এই সিদ্ধান্তে তাঁর বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই।

অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে গ্রেপ্তার করা হল কারণ অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা তাঁর মত ভারতীয় জনতা পার্টির পছন্দ হয়নি। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার আজ শুধু কাগজে-কলমেই আছে, বাস্তবে নেই। যারা এ-কাজ করছে, তারা দেশের সংবিধানকে বিশ্বাস করে না; তারা বিশ্বাস করে না যে দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিজস্ব মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধানের ১৯(১) ধারায় উল্লিখিত একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার।

পাশাপাশি অবশ্য ১৯(২) ধারাও আছে, যেখানে মতপ্রকাশের অধিকারে যুক্তিসঙ্গত প্রতিবন্ধকতার কথাও বলা হয়েছে— যেমন কারও মন্তব্য যদি দেশের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বা হিংসায় উসকানি দেয়, তাহলে সেই মত অবশ্যই নিষিদ্ধ ও বর্জনীয়। কিন্তু কে ঠিক করে দিচ্ছে যে আমার প্রকাশিত মত দেশের শৃঙ্খলা ও সুরক্ষার পক্ষে যথাযথ কি না? পাড়ার কিছু গুন্ডা? কিছু মস্তান নিদান দিচ্ছে, একজনের মন্তব্যকে ঘৃণার চোখে দেখে, এবং তার ভিত্তিতে পুলিশ সেই লোকটিকে গ্রেপ্তার করছে? এটা কি গণতন্ত্র?

অথচ দেশের গণমাধ্যমের বড় একটা অংশ এবং সোশাল মিডিয়া এই ঘৃণা ছড়ানোর কাজটাই করে যাচ্ছে, আর সেই সময় কর্তৃপক্ষ ও শাসক দল কিছুই না দেখার ভান করে অন্যদিকে চেয়ে আছে।

Image removed.

 

আমি এত কিছু সত্ত্বেও এখনও আশা করছি, দেশের মানুষ খুব শিগগিরই এই সংকটটা বুঝবে এবং এই চ্যানেলগুলোর প্রকৃতি চিনে তাদের পরিহার করবে। একইভাবে, সোশাল মিডিয়ায় এই ধরনের মিথ্যা ও অসাধু পোস্টের বিরুদ্ধেও তারা প্রতিবাদে সরব হবে।

আর সাধারণ মানুষ যখন তার নিজের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন ও শিক্ষিত হবে, তখনই এই পরিবর্তন বাস্তবায়িত হতে পারে। আপাতত, এই পরিস্থিতিতে, আমি এইটুকুই আশা করতে পারি।

Image removed.


[1] ২০২৩ সালের নভেম্বরে গাজায় ইজরায়েলি বিমান হামলার একটি ভিডিও, যা মূলত আল জাজিরার প্রতিবেদনে ব্যবহৃত হয়েছিল, সেটিকে ‘সিয়ালকোটে ভারতীয় সেনার হামলা’ বলে প্রচার করা হয়েছে। গাজার একটি বোমা হামলার ছবি ‘করাচি বন্দরে ভারতীয় হামলা’ বলেও প্রচার করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে—

[2] কয়েকটা নমুনা দেওয়া যাক। এই ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময়, আজ তক চ্যানেল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মিথ্যা দাবি প্রচার করেছে, যা পরে ভুয়ো প্রমাণিত হয়েছে। রিপাবলিক টিভি অতীতে বিভিন্ন ভুয়ো খবর প্রচার করেছে, যেমন: ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালিবানদের সহায়তায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি ভিডিওগেম ফুটেজকে বাস্তব বলে প্রচার করা; ২০২৩ সালে পেন্টাগনের কাছে বিস্ফোরণের একটি এআই-জেনারেটেড ছবি বাস্তব বলে প্রচার করা। জি নিউজ-ও অতীতে বিভিন্ন ভুয়ো খবর প্রচার করেছে, যেমন, ২০২১ সালে কৃষক আন্দোলনের সময় জার্মানির একটি ভিডিওকে ভারতের কৃষক আন্দোলনের ভিডিও বলে প্রচার করেছিল এরা। এই ঘৃণ্য সাংবাদিকতা নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন—

Featured Book: As Author
Flying Lies?
The Role of Prime Minister Narendra Modi in India's Biggest Defence Scandal
Also available:
 
Documentary: Featured
Featured Book: As Publisher
Stout and Tender
A Collection of Poems Pure & Impure
  • Authorship: Badri Raina
  • Publisher: Paranjoy Guha Thakurta
  • 450 pages
  • Published month:
  • Buy from Amazon